করোনা ভাইরাসের যে ভালো দিকগুলো জানার বাকি আছে

এক করোনা ভাইরাসেই পৃথিবী নাস্তানাবুদ। অকে অন্যের হতে বিচ্ছিন্ন দেশগুলো। গোটা বিশ্ব তাকে প্রতিহত করতেই হিমশিম খাচ্ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে হাজারো মানুষ।

এতো গেল নেতিবাচক দিকগুলো। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হলেও এর কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

হাত পরিষ্কারের অভ্যাস
এই ভাইরাস মোকাবেলার অন্যতম কাজ নিয়মিত হাত ধোয়া। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকেই হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারকাদের থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ সবাই সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়ার প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।

হাত ধোয়ার ফলে যেমন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকা যাচ্ছে তেমনি রেহাই পাওয়া যাচ্ছে ফ্লু জনিত অন্যান্য রোগ থেকেও। এ ক্ষেত্রে জাপানের কথা উল্লেখ করা যায়। দেশটিতে ফ্লু জনিত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

জাপানে মার্চের শুরুর দিকে ফ্লু’র সবচেয়ে অনুকূল সময়ে ফ্লু জনিত রোগীর সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে ৭২ লাখের কিছু বেশি। সাধারণত দেশটিতে ফ্লু’র সময়কাল চলে মে পর্যন্ত। ২০১৭-১৮ মৌসুমে মৌসুমি ফ্লুতে জাপানের ২ কোটি এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। সে তুলনায় এবার সংখ্যাটা অনেক কম।

এ ব্যাপারে এএফপিকে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দাইশা ইনোই বলেন, “আমরা মনে করি, এটা (হাত ধোয়া) অন্যতম একটি কারণ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মানুষ এখন হাত ধোয়ার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন।”

কমেছে কার্বন নিঃসরণ
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক ফ্যাক্টরি। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ভ্রমণে। যানবাহন খুব কম চলছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতি একটা দুর্যোগের মুখে পড়লেও এই পরিস্থিতি সুখবর বয়ে এনেছে পরিবেশের জন্য।

‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’ এর তথ্যমতে চলতি মার্চের শুরুর চার সপ্তাহে চীন আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ২০ কোটি টন বা ২৫ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ করেছে। এর পরিমাণ আর্জেন্টিনা, মিশর বা ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর বার্ষিক কার্বন নিঃসরণের সমান।

করোনার এই পরিস্থিতিতে চীনে কয়লার ব্যবহার কমেছে ৩৬ শতাংশ। একই পরিমাণ কমেছে জ্বালানি তেলের ব্যবহারও। ব্যাপক হারে ফ্লাইট বাতিল করায় কমে এসেছে বিমান চলাচলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও।

কমেছে পানির দূষণও। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইতালির ভেনিসের লেকগুলো। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে লেকগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ায় পানি হয়ে উঠেছে স্পটিক-স্বচ্ছ।

তবে এই পরিষ্কার বায়ু-পানি বেশি দিন টিকবে না, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হতেই আবার দূষণ শুরু হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বিশ্বাস, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি শেষ হতেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্বিগুণ চেষ্টা চালাবে দেশগুলো। আর অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি উদ্ধারের তোরে সাইডলাইনে চলে যাবে জলবায়ু দূষণের ব্যাপারটি।

বাঁচছে বন্য জীব
কিভাবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে এ প্রশ্নের এখনো সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে চীনের উহানের যে বাজার থেকে এই ভাইরাসের শুরু সেখানে খাওয়ার জন্য বন্য প্রাণী কেনা-বেচা হতো। বাদুড় ও বিলীন হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকিতে থাকা বন রুইসহ বেশ কয়েকটি প্রাণীকে এই ভাইরাসের সম্ভাব্য বাহক বলে মত দেন অনেকে।

এরপরই ফেব্রুয়ারিতে বন্যপ্রাণী কেনা-বেচা এবং খাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে চীন। চীন সরকারের এই পদক্ষেপ পরিবেশবাদীদের প্রশংসাও কুড়ায়।

২০০০ সালের দিকে সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময়ও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল বেইজিং। কিন্তু বাদুড়, সাপসহ বন্যপ্রাণীর ব্যবসা আবারও শুরু হয়। কিন্তু এবারের নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে দেওয়া হয়েছে। তাতে আশা করা হচ্ছে, চীনে বন্য প্রাণীর ব্যবসার অবসান ঘটবে।

সহমর্মিতা
করোনাভাইরাসে কারণে লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেককে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসও বিচ্ছিন্ন থাকতে হচ্ছে। পরিবার, পরিজন ছেড়ে থাকতে হচ্ছে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে।

এতে একাকিত্বের পরিস্থিতি তৈরি হলেও কঠিন এই পরিস্থিতিতে সহমর্মিতা যেন আরও বেড়েছে। সবাই পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের খবর নিচ্ছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ার উপায় বাতলে দিচ্ছেন। এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। অনেকে গ্রুপ অ্যাকাউন্ট করে পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।